
সুস্থতার জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত হলো—শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম । পরিশ্রম না করলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে। কমে যায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। পরিশ্রমহীন শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে সহজেই । তাই সুস্থতার জন্য শারীরিক পরিশ্রমের দিকে অধিকতর গুরুত্বারোপ করেছে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ।
রাসূল সব সময় পরিশ্রমের মধ্যে থাকতেন। তিনি মদিনার রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মানুষের খোঁজখবর নিতেন, দেখা-সাক্ষাৎ করতেন আত্মীয়স্বজনের সাথে। হাঁটার সময় নবিজি দ্রুত পদক্ষেপে হাঁটতেন। এতে তাঁর শরীরের ক্যালোরি বা শক্তি ক্ষয় হতো। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন—
‘আমি রাসূলুল্লাহ স-এর চেয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে দ্রুত চলতে আর কোনো ব্যক্তিকে দেখিনি। যেন তাঁর জন্য জমিনকে গোটানো হতো। তাঁর সঙ্গে পথ চলতে আমাদের বেগ পেতে হতো; অথচ তিনি অনায়াসে চলতে পারতেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান : ৬৩০৯)
নবুয়তি ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন শেষে রাসূল বাড়িতে এসে স্ত্রীদের রান্নার কাজে সহায়তা করতেন। একবার উম্মুল মুমিনিন আয়িশা (রা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, রাসূলুল্লাহ * ঘরে থাকলে কী করতেন? জবাবে আয়িশা (রা.)
বললেন-
‘তিনি ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন এবং আজান হলে নামাজে চলে যেতেন।’ (বুখারি : ৬৭৬)
রাসূল * সর্বদা নিজের কাজ নিজে করতেন। উম্মুল মুমিনিন আয়িশা (রা.) বলেন-
রাসূল নিজের কাপড়ের উকুন পরিষ্কার করতেন, বকরির দুধ
দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’
(মুসনাদে আহমদ : ২৬১৯৪)
অন্য বর্ণনায় বলেন-
রাসূলুল্লাহ কাপড় সেলাই করতেন এবং নিজের জুতা নিজেই ঠিক করতেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান : ৫৬৭৭)
যুবক বয়সে ব্যাবসা করেছেন। তারও আগে মেষ চরিয়েছেন মরু প্রান্তরে । আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবিজি বলেছেন-
‘আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো নবি প্রেরণ করেননি, যিনি মেষ চরাননি।’ তখন সাহাবিরা প্রশ্ন করেন—‘আপনিও?’ তিনি বলেন— ‘হ্যাঁ, আমি কয়েক কিরাতের (মুদ্রা) বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতাম।’ (বুখারি : ২১১৯)
মদিনায় হিজরতের পর মসজিদে নববি নির্মাণের সময় রাসূল নিজ হাতে মাটি বহন করেছেন, সরাসরি খনন কাজে অংশগ্রহণ করেছেন খন্দক যুদ্ধে । এ ছাড়াও যুদ্ধের ময়দানে সরাসরি মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই সমস্ত কর্মকাণ্ড নবিজির কায়িক পরিশ্রমের সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত বহন করে ।
রাসূলুল্লাহ শুধু নিজেই পরিশ্রম করতেন না; বরং উম্মতকেও পরিশ্রমী হতে এবং স্বহস্তে উপার্জন করতে তাগিদ দিতেন। তিনি বলেন— ‘আল্লাহ ওই শ্রমিককে ভালোবাসেন, যে সুন্দরভাবে নিজের কাজ সমাধা করে।’ (তিরমিজি : ১৮৯১)
‘নিজের হাতের উপার্জন অপেক্ষা উত্তম খাবার বা জীবিকা আর নেই । আল্লাহর নবি দাউদ (আ.) স্বহস্তে জীবিকা নির্বাহ করতেন।’ (বুখারি : ২৭৫৯)
অন্য হাদিসে নবিজি বলেন-
“নিশ্চয়ই তোমার ওপর তোমার শরীরের হক রয়েছে।’
(বুখারি : ৫৭০৩, তিরমিজি : ২৩৫০ )