
মানুষ তার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে নিজ নিজ চিন্তার আলোকে। এই চিন্তা গঠিত হয় তার অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। এই জ্ঞানার্জনের অন্যতম প্রধান উপায় হলো—নিয়মিত অধ্যয়ন ও অধ্যবসায়। মানুষকে বাস্তব জীবনে সবচেয়ে গভীরভাবে প্রভাবিত করে—তার অর্জিত জ্ঞান। তাই সঠিকভাবে জীবনযাপনের জন্য শুদ্ধ জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য । মানুষ যখন সঠিকভাবে জানে—সে কে, কোথা থেকে তার আগমন, কীভাবে তার সৃষ্টি, কী তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য, কোথায় গন্তব্য, প্রকৃত দায়িত্বই-বা কী, তখন সে জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে সচেষ্ট হয়। নিবেদিত হয় জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জনে।
বিশুদ্ধ জ্ঞানের প্রধান উৎস হলো কুরআন ও হাদিস। এখানেই রয়েছে মানুষের জীবন পরিচালনার সর্বোত্তম নির্দেশিকা। ফলে জীবনকে সঠিক কক্ষপথে রাখতে কুরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। ইসলামের এই প্রধান দুই উৎস অধ্যয়নের মাধ্যমেই একজন মুমিন জানতে পারে—কে তাকে সৃষ্টি করেছেন? কেন সৃষ্টি করেছেন? তার চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় এবং কীভাবে সেখানে যেতে হবে? ফলে কুরআন-হাদিসে বিজ্ঞ মুমিন বান্দারাই কেবল জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে সক্ষম হন। আর এই কারণেই তারা আল্লাহকে ভালোবাসেন সবচেয়ে বেশি; তাঁর শাস্তিকে ভয় করেন এবং হুকুম-আহকামের ব্যাপারে থাকেন সদা সতর্ক। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
اِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمُوا –
‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে । (সূরা ফাতির : ২৮)
এই ভয় ও ভালোবাসার যৌথ শক্তিতে কুরআন-হাদিসের জ্ঞানে আলোকিত মুমিনরা সক্ষম হয় শয়তানের ধোঁকাকে ঠেকিয়ে দিতে। তাদের অন্তর হয় সজীব ও সতেজ, হৃদয় থাকে রবের প্রেমে মশগুল। অন্তরের এই নিষ্কলুষ চরিত্রই তাদের মহান রবের দিকে ধাবিত করে।
মালেক ইবনে দিনার (রহ.) বলেছেন—
‘নিশ্চয়ই কুরআন হলো হৃদয়ের প্রাণ, যেমন মাটির প্রাণ বৃষ্টি ।’
নিয়মিত কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন স্মরণ করিয়ে দেবে আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্কের কথা। আমরা অনেকেই শুধু কুরআন তিলাওয়াত করি, কিন্তু বোঝার চেষ্টা করি না মোটেই। এতে কিছু সওয়াব হয় ঠিক, কিন্তু কুরআনের প্রকৃত হক আদায় হয় না। অথচ কুরআন পাঠের অর্থ হলো—আল্লাহর সাথে কথা বলা। যদি বোঝার চেষ্টাই না করি, তাহলে কথোপকথনের মর্ম উপলব্ধি করা প্রায় অসম্ভব।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর বর্ণনায় বিশ্বনবি * বলেন—
‘নিশ্চয়ই হৃদয়ে মরিচা ধরে, যেভাবে পানি লাগলে লোহায় মরিচা ধরে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো-“হে আল্লাহর রাসূল! এ মরিচা দূর করার উপায় কী?” তিনি বললেন—“বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ এবং কুরআন তিলাওয়াত।”
(বায়হাকি, শুআবুল ঈমান : ১৮৫৯ )
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে তাই নিয়মিত কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন করা একান্ত কর্তব্য। পাশাপাশি ইসলাম বুঝতে সহায়ক সাহিত্য পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলাও জরুরি ।