Shopping Cart
৳ 0.00

No products in the cart.

আহ্বান: ড. মিজানুর রহমান আজহারি

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা (Hygiene )

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাসূলুল্লাহ -এর সুস্থতার অন্যতম বড়ো হাতিয়ার। তিনি সব সময়ই পরিচ্ছন্ন থাকতেন এবং অন্যকেও পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশ দিতেন ।

পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা দুটি কাছাকাছি বিষয়। ঈমান ও নিয়্যাতের সাথে নির্দিষ্ট নিয়মে পরিচ্ছন্নতা অর্জনকে পবিত্রতা বলে। সুতরাং পবিত্রতা অর্জন করলেই পরিচ্ছন্নতা অর্জন হয়। রাসূল এই পবিত্রতা অর্জনকে ঈমানের অর্ধেক বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আবু মালেক হারেস ইবনে আসেম আশআরি (রা.) বলেন, রাসূল বলেছেন—

‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম : ২২৩)

পবিত্রতা অর্জনকারীকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে—

فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَرُوا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَهِّرِينَ

‘সেখানে রয়েছে এমন লোক, যারা পবিত্রতাকে বেশি ভালোবাসে। আর আল্লাহও পবিত্র লোকদের ভালোবাসেন।’ (সূরা তাওবা : ১০৮)

রাসূলুল্লাহ -এর একটি কর্মনীতি ছিল—যে কাজটির ওপর তিনি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করতে ইচ্ছা করতেন, সেটিকে আল্লাহর ইচ্ছায় ঈমান ও ইবাদতের সাথে সম্পৃক্ত করতেন এবং অনিবার্যভাবেই ফজিলত ঘোষণা করতেন, সেই আমলটির বিপরীতে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটিও অনুরূপ। এই বিষয়টিকে তিনি এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, একে সাব্যস্ত করেছেন ঈমানের অঙ্গ হিসেবে। শুধু তা-ই নয়, রাসূল পবিত্রতাকে নামাজ আদায়ের পূর্বশর্ত হিসেবেও নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং নামাজ কবুলের জন্য একজন মুসলিমকে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হবে।

পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হলো অজু-গোসল ও তায়াম্মুম। অজু-গোসলের জন্য আবার পানি প্রয়োজন। পানি না পাওয়া গেলে বা পানি ব্যবহারে অপারগ হলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করতে হবে। আর এটি মূলত আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্রতা অর্জনের একটি প্রতীকী পদ্ধতি। কঠিন সময়েও যেন বান্দার মধ্যে পবিত্রতা অর্জনের অভ্যাস ও তাড়না বজায় থাকে এবং অন্তরের অস্বস্তিবোধ দূর হয়, সেটা নিশ্চিত করাটাই তায়াম্মুমের প্রধান উদ্দেশ্য

যে অঙ্গসমূহ সাধারণত উন্মুক্ত থাকে এবং স্বাভাবিক কাজকর্মে আমরা নিয়মিত ব্যবহার করি, অজু করার জন্য শরীরের সে অঙ্গসমূহকেই ধৌত করতে হয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে—মানুষের অসুস্থ হওয়ার অন্যতম কারণ শরীরে ক্ষতিকর জীবাণুর প্রবেশ। এই জীবাণুগুলো প্রধানত নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মানুষের হাতে, আঙুল ও নখের ফাঁকে জীবাণু আটকে থাকে। খাবার গ্রহণ বা অন্য কোনো কারণে মুখে হাত দেওয়ার সময় এগুলো দেহাভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এই জন্য চিকিৎসকগণ সর্বদা হাত ও বাহ্যিক অঙ্গসমূহ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেন।

অজুর মাধ্যমে এই পরিষ্কারের কাজটি সম্পন্ন হয়। কারণ, অজুর জন্য প্রথমে হাতের কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হয়। আঙুলের ফাঁকগুলো খিলাল করতে হয় ভালোভাবে। এরপর তিনবার ধৌত করতে হয় হাতের কনুই পর্যন্ত। এতে হাতে জমে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয়। পরবর্তী ধাপে তিনবার গড়গড়ার সাথে কুলি করার মাধ্যমে মুখগহ্বরে জমে থাকা জীবাণুগুলোও অপসারিত হয়ে যায় ।

নিশ্বাসের সাথে কিছু ময়লা আমাদের নাকে জমে থাকে। এ ছাড়া বাইরের ধুলোবালি শরীরের ভেতরে ঢুকে ফুসফুসসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে আক্রান্ত করে । অজু করার জন্য একজন ব্যক্তিকে নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত

রাসূলুল্লাহ -এর একটি কর্মনীতি ছিল—যে কাজটির ওপর তিনি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করতে ইচ্ছা করতেন, সেটিকে আল্লাহর ইচ্ছায় ঈমান ও ইবাদতের সাথে সম্পৃক্ত করতেন এবং অনিবার্যভাবেই ফজিলত ঘোষণা করতেন, সেই আমলটির বিপরীতে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটিও অনুরূপ। এই বিষয়টিকে তিনি এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, একে সাব্যস্ত করেছেন ঈমানের অঙ্গ হিসেবে। শুধু তা-ই নয়, রাসূল পবিত্রতাকে নামাজ আদায়ের পূর্বশর্ত হিসেবেও নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং নামাজ কবুলের জন্য একজন মুসলিমকে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হবে।

পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হলো অজু-গোসল ও তায়াম্মুম। অজু-গোসলের জন্য আবার পানি প্রয়োজন। পানি না পাওয়া গেলে বা পানি ব্যবহারে অপারগ হলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করতে হবে। আর এটি মূলত আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্রতা অর্জনের একটি প্রতীকী পদ্ধতি। কঠিন সময়েও যেন বান্দার মধ্যে পবিত্রতা অর্জনের অভ্যাস ও তাড়না বজায় থাকে এবং অন্তরের অস্বস্তিবোধ দূর হয়, সেটা নিশ্চিত করাটাই তায়াম্মুমের প্রধান উদ্দেশ্য।

যে অঙ্গসমূহ সাধারণত উন্মুক্ত থাকে এবং স্বাভাবিক কাজকর্মে আমরা নিয়মিত ব্যবহার করি, অজু করার জন্য শরীরের সে অঙ্গসমূহকেই ধৌত করতে হয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে—মানুষের অসুস্থ হওয়ার অন্যতম কারণ শরীরে ক্ষতিকর জীবাণুর প্রবেশ। এই জীবাণুগুলো প্রধানত নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মানুষের হাতে, আঙুল ও নখের ফাঁকে জীবাণু আটকে থাকে। খাবার গ্রহণ বা অন্য কোনো কারণে মুখে হাত দেওয়ার সময় এগুলো দেহাভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এই জন্য চিকিৎসকগণ সর্বদা হাত ও বাহ্যিক অঙ্গসমূহ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেন ।

অজুর মাধ্যমে এই পরিষ্কারের কাজটি সম্পন্ন হয়। কারণ, অজুর জন্য প্রথমে হাতের কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হয়। আঙুলের ফাঁকগুলো খিলাল করতে হয় ভালোভাবে। এরপর তিনবার ধৌত করতে হয় হাতের কনুই পর্যন্ত। এতে হাতে জমে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয়। পরবর্তী ধাপে তিনবার গড়গড়ার সাথে কুলি করার মাধ্যমে মুখগহ্বরে জমে থাকা জীবাণুগুলোও অপসারিত হয়ে যায় ।

নিশ্বাসের সাথে কিছু ময়লা আমাদের নাকে জমে থাকে। এ ছাড়া বাইরের ধুলোবালি শরীরের ভেতরে ঢুকে ফুসফুসসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে আক্রান্ত করে । অজু করার জন্য একজন ব্যক্তিকে নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত ভালো করে তিনবার পানি পৌঁছাতে হয়। এতে নাকে জমে থাকা সমস্ত ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। এভাবে অজুর মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তি সর্বোত্তম উপায়ে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করে ।

রাসূল = সার্বক্ষণিক অজু অবস্থায় থাকতেন এবং প্রত্যেক সালাতের পূর্বে নতুন করে অজু করতেন। উম্মতকেও তিনি প্রতি সালাতের পূর্বে অজু করতে উৎসাহ দিতেন, যাতে তারা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে সর্বাবস্থায়। অজুকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি একে অবিহিত করেছেন সালাতের চাবি হিসেবে। বলেছেন-

‘সালাত বেহেশতের চাবি; আর অজু (পবিত্রতা) সালাতের চাবি।’ ( তিরমিজি : ৪ )

পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জনের দ্বিতীয় মাধ্যম গোসল। রাসূল

পবিত্রতা

ও পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে গোসল করতেন এবং উম্মতকেও উৎসাহ দিতেন। কিছু ক্ষেত্রে গোসলকে তিনি বাধ্যতামূলক করেছেন । যেমন : দাম্পত্যজীবনে শারীরিক মিলনের পর এবং নারীদের ঋতুকালীন অবস্থা শেষ হওয়া পর গোসল করা ফরজ। আর স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গোসল করা মুস্তাহাব। নিদেনপক্ষে প্রত্যেকে যেন সপ্তাহে অন্তত একবার গোসল করে, তা নিশ্চিতের জন্য নবিজি জুমার দিন গোসল করার প্রতি অধিক জোর দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-

‘সব মুসলমানের ওপর আল্লাহর অধিকার হলো—প্রতি সপ্তাহে সে গোসল করবে এবং মাথা ও শরীর ধুয়ে নেবে।’ (বুখারি : ৮৯৭)

আবু হুরায়রা (রা.)-এর অন্য বর্ণনায় রাসূল

বলেন-

‘আল্লাহ তায়ালার জন্য প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য হলো (অন্তত) প্রতি সাত দিনের মাথায় নিজের মাথা ও শরীর ধৌত করা।’ (বুখারি : ৮৯৭, মুসলিম : ৮৪৯)

আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল

বলেছেন—

‘জুমার দিন গোসল করা প্রতিটি সাবালক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব।’

( বুখারি : ৪৭৯)

অজু-গোসলের বাইরেও রাসূল শরীরের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার দিকে যত্নশীল ছিলেন। তিনি মুখের পরিচ্ছন্নতার ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করতেন; 

দিনের কার্জক্রম শুরু করতেন মেসওয়াক করার মধ্য দিয়ে। যেকোনো সোশ্যাল ইন্টারেকশন এমনকী স্ত্রীদের কাছে যাওয়ার আগেও মেসওয়াক করতেন। বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করেই প্রথমে মেসওয়াক করে নিতেন । হুজাইফা (রা.) বলেন-

*রাসূল ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মেসওয়াক করতেন।’ (আবু দাউদ : ৫৭)

শুধু ভোরেই নয়, নবিজি প্রতি সালাতের পূর্বে দৈনিক পাঁচবার মেসওয়াক করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল বলেন—

‘আমার উম্মতের ওপর যদি কষ্টসাধ্য না হতো, তাহলে প্রত্যেক নামাজের অজুর সঙ্গে মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’ (মুসলিম : ৪৮২)

উম্মাহকে মেসওয়াকের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য রাসূল

মেসওয়াককে ‘মুখের জন্য পবিত্রতা’ বলে ঈমানি পরিভাষায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। একই সঙ্গে একে ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম বলে । তিনি বলেন—

‘মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রতা এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।’ (নাসায়ি : ৫)

এর বাইরে নবিজি প্রতি সপ্তাহান্তে বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার হাত-পায়ের নখ কাটতেন এবং গোফ ছোটো করতেন। বগল ও নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করতেন ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই। পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-দুয়ার ও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার প্রতিও নবিজি ছিলেন অত্যন্ত যত্নশীল । এ ব্যাপারে তিনি মানুষকে সর্বক্ষণ সচেতন করতেন। বলতেন—

‘তোমাদের বাড়ির আঙিনার চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখ। ইহুদিদের অনুকরণ করো না। কেননা, ইহুদিরা তাদের বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করে না। তারা বাড়িতে আবর্জনা জমা করে রাখে।’ (মাজমাউজ-জাওয়াইদ : ১/২৮৬)

আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেন-

‘রাসূলুল্লাহ পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করতে এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ : ৪৫৫)

মন প্রফুল্ল রাখার জন্য রাসূল

নিয়মিত সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। হাতের

তালুতে ও চুলের সিঁথির মাঝখানে এই সুগন্ধি লাগাতেন। ফলে যারাই রাসূল -এর সাথে মুসাফাহা করতেন, তাদের প্রত্যেকের হাতে আতরের ঘ্রাণ লেগে থাকত । রাসূল-এর শরীর থেকে দুর্গন্ধ পেয়েছেন, মর্মে কেউ কোনোদিন অভিযোগ করতে পারেননি। কেননা, তাঁর ঘাম মোবারক থেকেও আল্লাহ প্রদত্ত সুগন্ধ ছড়াত। রাসূলুল্লাহ -এর এসব অনুশীলন থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় – পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে তিনি কতটা গুরুত্ব দিতেন ।

Home Shop Cart Account